ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে অস্ত্র মামলায় ১৪ বছরের সাজা, কারাগারে প্রেরন

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজ দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি শপথ নিয়ে দায়িত্বভারও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দায়িত্বগ্রহণ করে গুছিয়ে উঠার আগেই তাকে যেতে হলো কারাগারে। তাও ১৪ বছরের জন্য! এক অস্ত্র মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ। রায় ঘোষণাকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর। তাই সাথে সাথেই তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সদ্য দায়িত্ব দায়িভার গ্রহণ করা জাহাঙ্গীর আলমের ১৪ বছর এবং কারাগারের পাঠানোর ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট’এ পরিণত হয়েছে। এই খবর শুনে অধিকাংশ মানুষ বলছেন- এ কেমন নসীব জাহাঙ্গীরের!

২০০৭ সালের ১৩ আগষ্ট নিজ বাড়ি থেকে দশ রাউন্ড কার্তুজ, তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৭ লাখ টাকাসহ তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করেছিল র‌্যাব। এসময় তার আরো চারভাইকেও আটক করেছিল। র‌্যাব-৭ এর তৎকালীন কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন ওই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় র‌্যাব বাদি হয়ে অস্ত্র মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় ১৫ দিন জেলে কেটে কারামুক্ত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।


আদালত সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২১ মাস ধরে ওই মামলার বিচারকার্য চলে। এসময় আসামীরা বিচারকার্যে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ শুনানী এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (৯মে) মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেন। দুপুর ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য আসামীদের উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণা করেন জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার প্রধান আসামী সদ্য নির্বাচিত পেকুয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। অন্যান্য আসামীদের বেকসুর খালাস দেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপিএ এডভোকেট মমতাজ আহমদ জানান, সাক্ষ্য প্রমাণে মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়। তাই আইন মতে আদালত তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শুরু থেকেই এই ঘটনাকে পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে আসছিলেন জাহাঙ্গীরসহ অন্যরা। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে আঁতাত করে র‌্যাব পরিকল্পিতভাবে ওই উদ্ধারের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। রায় ঘোষণাকালেও বিচারকের সামনে জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্যরা এই দাবি করেছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মামলা নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতেন জাহাঙ্গীর আলম। মামলাটি সমঝোতা করার জন্য নানা চেষ্টা-তদবিরও করেছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাতে সফল হননি তিনি। মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করার পর থেকে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তার আশঙ্কা ছিলো বড় অঘটন ঘটতে পারে। তাই আজ (৯মে) রায় ঘোষণাকালে উপস্থিত নাও হতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে আইনজীবির পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হয়েছিলেন।

সচেতন লোকজন বলছেন, ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় জাহাঙ্গীরের হয়তো আর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা হবে না। দায়িত্ব নিয়েই তার এমন নসীব তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা মানতে পারছেন না। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের লোকজন।

এদিকে সদ্য দায়িত্বভার গ্রহণ করেই সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিধি মতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর আলম। এই নিয়ে পেকুয়ায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। পুন: নির্বাচন নিয়েও আলোচনা এখন বেশ তুঙ্গে উঠেছে।

পাঠকের মতামত: